নিউজ ডেস্ক :: চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক রাজনৈতিক নেতাকর্মী। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্কের কারণে ভাটা পড়েছে ত্রাণ তৎপরতায়ও। করোনায় জেলায় এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক। এছাড়াও আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন দুই দলের দুই সিনিয়র নেতা। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সিনিয়র এক আওয়ামী লীগ নেতা। দুই দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। এর মধ্যে মারা গেছেন কমপক্ষে ২০ জন। অবশিষ্ট নেতাকর্মী বাসায় ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানেও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তবে দুই দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, করোনায় আক্রান্ত হলে বেশিভাগ নেতাকর্মী নাম প্রকাশ করে না। তারা বাসাবাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এজন্য প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
এদিকে ঈদের আগে ত্রাণ নিয়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা থাকলেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির কারণে তাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ কারণে ঈদের পর ত্রাণ তৎপরতা অনেকটা কমে যায়।
করোনায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন ও তাঁর পুত্র, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চন্দনাইশ পৌরসভার মেয়র মাহবুবুল আলম খোকা প্রমুখ। সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, হাসিনা মহিউদ্দিন এবং এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল বর্তমানে করোনামুক্ত।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, করোনায় নগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কমপক্ষে ৭ নেতা মারা গেছেন। এরা হলেন, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর নুরুল আলম, চান্দগাঁও থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ নুরুল ইসলাম, নগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুবুল হক এটলি, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী শফিউল আলম, মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. রফিকুল আলম, সদরঘাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী এবং কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনিস মিয়া।’
শফিকুল ইসলাম ফারুক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হলেও আমাদের কাছে প্রকৃত কোন তথ্য নেই। কারণ নেতাকর্মীদের অনেকে আক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ করেন না। তাই আমাদের কাছে সঠিক কোন তথ্য নেই।’
মহানগর বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘করোনায় বিএনপির কমপক্ষে ৮ নেতার মৃত্যু এবং কমপক্ষে ২০ নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স-পরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নগরের সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান। বর্তমানে তিনি করোনামুক্ত। এছাড়া করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপি নেতা ও বার কাউন্সিল সদস্য এডভোকেট কবির চৌধুরী, মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা ও এ্যাব সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কে এম সুফিয়ান, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি কামাল উদ্দিন কন্ট্রাকটার, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সৈয়দ আহম্মদ, পাহাড়তলী সরাইপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এসকান্দর উল্লাহ, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সভাপতি শামসুল আলম, ডবলমুরিং থানা বিএনপির সহ সভাপতি মো. করিম উল্লাহ প্রমুখ। এছাড়া করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক সিহাব উদ্দিন মোবিন, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সেলিম উদ্দিন শাহিন, মহানগর যুবদল সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, নগর ছাত্রদল নেতা সালাউদ্দীন আলী, আমিন শিল্পাঞ্চল সাংগঠনিক ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামসহ প্রায় ২০ নেতাকর্মী।’
পাঠকের মতামত: